দ্রুত ইংরেজি শেখার ১০টি সহজ টিপস: ঘরে বসে যেভাবে ইংরেজি শিখবেন
ইংরেজি শেখার সহজ উপায়: বর্তমান উন্নত বিশ্বে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি জানা থাকলে আপনি অন্যদের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারেন। ভালো চাকরি হোক বা উচ্চশিক্ষা, দেশেই হোক বা বিদেশে – সব ক্ষেত্রেই ইংরেজি দক্ষতা আপনাকে দেবে বাড়তি সুবিধা। অনেকে মনে করেন ইংরেজি শেখা বেশ কঠিন বা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু আসলে তা নয়। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এবং ইচ্ছা শক্তি থাকলে মাত্র ৫-৬ মাসের মধ্যেই আপনি ইংরেজিতে বেশ ভালো দখল আনতে পারেন।
ইংরেজি শেখার সহজ উপায় – কার্যকরী ১০টি টিপস
আর এই শেখার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও কার্যকর করতে অনলাইনে প্রচুর রিসোর্স এবং পেশাদার প্ল্যাটফর্ম যেমন ঘুড়ি লার্নিং-এর মতো প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ইংরেজি লার্নিং কোর্স সরবরাহ করছে। স্পিকিং, রাইটিং, লিসেনিং, রিডিং, গ্রামার, ভোকাবুলারি আয়ত্ত করা থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিসের যোগাযোগ – সবই এখন ঘরে বসে খুব সহজে শেখা সম্ভব। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাকে ইংরেজি শেখার সহজ উপায়, দ্রুত ইংরেজি শেখার কয়েকটি কার্যকর টিপস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে। চলুন জেনে নিই সেই ১০টি ইংরেজি শেখার সহজ উপায় যা আপনার ইংলিশ শেখার যাত্রাকে অনেক সহজ করে তুলবে।
১. হাতের কাছে যা পাবেন, ইংরেজিতে পড়ুন
আপনার সামনে ইংরেজি ভাষার যা কিছুই আসুক না কেন, হোক তা সাহিত্য, খবরের কাগজ, কোনো ব্লগ আর্টিকেল বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট – মন দিয়ে পড়ুন। পড়ার সময় নতুন কিছু ইংরেজি শব্দ (vocabulary) পেলে সেগুলো টুকে রাখুন। এতে আপনার শব্দভান্ডার বাড়বে এবং পরিচিত শব্দগুলোও আবার অনুশীলন করা হয়ে যাবে।
কোন পরিস্থিতিতে (context) কোন শব্দ ব্যবহার হয়, সে সম্পর্কে আপনার ধারণা পরিষ্কার হবে। যতো বেশি পড়বেন, আপনার রিডিং স্কিল ততো উন্নত হবে। এটি আপনার স্পিকিং এর সময় জড়তা কাটাতেও সাহায্য করবে এবং পড়া শব্দগুলো শুনে শুনে বুঝতেও সুবিধা হবে। প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে যা চোখে পড়ে, তা পড়ার অভ্যাস করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার ইংরেজি ভীতি কমে আসছে।
২. নতুন শব্দ বা ভোকাবুলারি নোট করুন
প্রতিদিন অন্তত একটি করে নতুন ইংরেজি শব্দ শেখার চেষ্টা করুন। শেখা শব্দগুলো ভুলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তাই যে নতুন শব্দগুলো শিখছেন, সেগুলো একটি নোটবুকে বা ডিজিটাল নোটে লিখে রাখুন। এতে পরে সেগুলো আবার দেখে নিতে পারবেন। শুধু শব্দ নয়, শব্দটির এক বা দুটি উদাহরণ বাক্যসহ লিখে রাখলে মনে রাখা আরও সহজ হয়। প্রথম দিকে হয়তো এটা একটু বোরিং মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে নোট রাখার অভ্যাসটা মজার হয়ে যাবে।
যখন অবসর পাবেন বা কোথাও যাত্রা করছেন, নোট থেকে শেখা শব্দগুলো ঝালিয়ে নিতে পারবেন। নিয়মিত এভাবে নোট করলে ৬ মাস পর আপনার শব্দভান্ডার বেশ সমৃদ্ধ হবে, যা আপনার ইংলিশ লার্নিং জার্নিকে আরও সুন্দর করবে। এই ভোকাবুলারি নোট করার পদ্ধতি আপনার অনেক সময় বাঁচিয়ে নতুন শব্দ শিখতে দারুণ সাহায্য করবে।
৩. সরাসরি কারো সাথে ইংরেজিতে কথা বলুন
একটি ভাষা শেখার মূল উদ্দেশ্যই হলো এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা। ইন্টারনেট যুগে সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল বা মেসেজিংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব হলেও, সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলেই আমরা দৈনন্দিন কাজগুলো সারেন। যেকোনো ভাষা দ্রুত শিখতে হলে সরাসরি সেই ভাষায় কারো সাথে কথা বলা বা ইন্টারেক্ট করাটা অত্যন্ত জরুরি। এতে আপনার ভেতরের জড়তা কেটে যায়। আপনার এমন একজন স্পিকিং পার্টনার খুঁজে বের করুন যার সাথে আপনি নিয়মিত ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন।
যেকোনো বিষয় নিয়ে তার সাথে ইংরেজিতে আলোচনা করুন। নতুন নতুন টপিক ঠিক করে ভালো-মন্দ সব দিক নিয়ে কথা বলুন। আজকাল হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মে ভয়েস কলের মাধ্যমেও এটা করা যেতে পারে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়, হতে পারে আধা ঘন্টা বা তার বেশি, কথা বলার অভ্যাস করুন। দেখবেন আপনার ইংরেজি শেখা অনেক সহজ হয়ে গেছে।
৪. ইংরেজি পডকাস্ট বা ইউটিউব শুনুন
আমাদের সবারই কিছু পছন্দের বিষয় থাকে যা নিয়ে জানতে আমরা সবসময় আগ্রহী থাকি। যেমন ভ্রমণ, প্রযুক্তি, বাগান করা বা রান্না। আপনার পছন্দের বিষয় খুঁজে নিয়ে সেই সম্পর্কিত ইংরেজি পডকাস্ট বা ইউটিউব ভিডিও নিয়মিত শুনুন ও দেখুন। ইউটিউবের মাধ্যমে এখন অনেক দারুণ জিনিস শেখা যায়, ইংরেজিও এর ব্যতিক্রম নয়।
আপনার পছন্দের ইংলিশ চ্যানেলগুলো সাবস্ক্রাইব করে নিয়মিত শুনতে থাকুন এবং দেখতে থাকুন। ইংরেজি পডকাস্ট বা ইউটিউব ভিডিও আপনার লিসেনিং স্কিল উন্নত করবে এবং একই সাথে নতুন নতুন শব্দ শিখতেও সাহায্য করবে। এছাড়াও, কীভাবে একটি বিষয় ব্যাখ্যা করতে হয়, বাক্য গঠন করতে হয় এবং অন্য কারো সাথে সেই বিষয় নিয়ে কীভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে হয়, সে সম্পর্কেও ধারণা পাবেন।
৫. আপনার পছন্দের বিষয়ে নিজে নিজে কথা বলুন
আপনি প্রতিদিন পছন্দের বিষয়ে পডকাস্ট শুনছেন বা ইউটিউব ভিডিও দেখছেন। এবার সেসব বিষয় নিয়ে নিজে নিজে কথা বলার অভ্যাস করুন। আপনার পছন্দের বিষয়টি অন্য কারো কাছে কীভাবে বর্ণনা করবেন, বা সে সম্পর্কে কীভাবে আলোচনা করবেন, তা মনে মনে সাজিয়ে নিন। এতে আপনার এক্সপ্লেইন করার ক্ষমতা বাড়বে এবং কথা বলার জড়তা দূর হবে।
যেসব নতুন শব্দের প্রয়োজন হবে, সেগুলোও খুঁজে বের করতে পারবেন। এভাবে যদি আপনি নিয়মিত নিজের সাথে নিজে ইংরেজিতে কথা বলেন, তাহলে আপনার ইংরেজিতে চিন্তা করার দক্ষতা বাড়বে এবং দুর্বলতা অনেকাংশে কমে আসবে। নতুন সব বিষয়ে কথা বলা বা ব্যাখ্যা করার আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।
৬. গ্রামার আয়ত্ত করুন
উপরের অভ্যাসগুলো ২-৩ মাস ধরে নিয়মিত করার পর এবার গ্রামারের দিকে মনোযোগ দিন। বিশেষ করে টেন্স (Tense) ভালোভাবে শিখুন এবং টেন্সের সাথে সম্পর্কিত বিষয় যেমন ভার্ব, পার্সন ইত্যাদি জেনে নিন। এজন্য ভালো গ্রামার বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন অথবা অনলাইনে ঘুড়ি লার্নিং-এর মতো প্ল্যাটফর্মের সমৃদ্ধ গ্রামার কোর্সগুলো দেখতে পারেন।
গ্রামার আপনাকে সঠিক বাক্য গঠনে সাহায্য করবে। এটি আপনার প্রফেশনাল ইমেইল লেখা, বিজনেস ডিল করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, উচ্চ শিক্ষার জন্য ভালো কান্ট্রিতে যেতে চাইলে থিসিস পেপার লেখা বা প্রেজেন্টেশন তৈরির ক্ষেত্রে গ্রামার জানাটা জরুরি।
৭. ইংরেজিতে প্রশ্ন করা ও উত্তর দেওয়া শিখুন
যেকোনো নতুন পরিবেশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় প্রশ্ন করা এবং উত্তর দেওয়া। আপনি যদি সঠিকভাবে প্রশ্ন করতে না পারেন, তাহলে নতুন পরিবেশে অনেক কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই আপনার চারপাশে প্রতিদিন যা ঘটছে, তা থেকে প্রশ্ন তৈরি করুন এবং নিজে নিজেই তার উত্তর দিন। এভাবে আপনার বেসিক প্রশ্ন করা এবং উত্তর দেওয়ার দক্ষতা বাড়বে। এটি যেকোনো কনভার্সেশনে আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
৮. সেন্টেন্স স্ট্রাকচারে নজর দিন
যেকোনো ভাষায় দক্ষ হওয়ার জন্য সেন্টেন্স স্ট্রাকচার বা বাক্য গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাক্য গঠন ঠিক থাকলে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতা বাড়বে। বিশেষ করে যখন আপনি ইংরেজিতে কিছু লিখবেন, তখন সঠিক সেন্টেন্স স্ট্রাকচার অনুসরণ করাটা খুব প্রয়োজন। এতে লেখার মান ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। আপনার স্পিকিংও সুন্দর হবে।
৯. নির্দিষ্ট লক্ষ্য (Goal) সেট করুন
কোনো কিছু শেখার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা গোল সেট করাটা খুবই জরুরি। আপনি কী শিখতে চান, কত দিনের মধ্যে কতটুকু আয়ত্ত করতে চান – তা ঠিক করে নিন। সেই অনুযায়ী প্রতিদিন কতটুকু সময় দেবেন, সেটাও ঠিক করুন। এতে আপনার শেখাটা গোছালো হবে। তা না হলে আপনি শিখতে থাকলেও নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানো কঠিন মনে হতে পারে। ছোট ছোট গোল সেট করে এগোলে অনুপ্রাণিত থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
১০. লোকে কী বললো, ভুলে যান
যখন প্রথম ইংরেজি শেখা শুরু করবেন, তখন ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এটা সাময়িক ব্যাপার। ধীরে ধীরে আপনি ভালো করতে শুরু করবেন। তাই ইতিবাচক থাকুন এবং শেখার আগ্রহ ধরে রাখুন। উপরের টিপসগুলো মেনে অনুশীলন করলে আপনি ৫-৬ মাসের মধ্যে একটি ভালো পর্যায়ে চলে আসতে পারবেন।
মাঝে মাঝে হয়তো মনে হবে শেখার গতি খুব ধীর, কিন্তু নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে গেলে অবশ্যই এগিয়ে যেতে পারবেন। অন্যরা কী ভাবছে বা কী বলছে, তা নিয়ে একদমই মাথা ঘামাবেন না। কারণ অন্যের কথা নিয়ে ভাবলে আপনি নিজেই পিছিয়ে পড়বেন। ভুল-শুদ্ধ যাই হোক না কেন, এগিয়ে যেতে থাকলে আপনার ইংরেজি যোগাযোগের দক্ষতা অবশ্যই উন্নত হবে।
কেন ইংরেজি শিখবেন?
ইংরেজি কেন শিখবেন, এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আপনার জানা আছে। তবুও আপনার অনুপ্রেরণা ধরে রাখার জন্য এবং বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে আরও ১০টি ছোট কারণ জেনে নেওয়া যাক:
- ১. বিদেশে উচ্চশিক্ষার দারুণ সুযোগ তৈরি হয়।
- ২. বিশ্বজুড়ে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ খুলে যায়।
- ৩. দেশে ভালো চাকরি পেতে সহায়তা করে।
- ৪. ইন্টারনেট ভিত্তিক ক্যারিয়ার গড়া বা ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ইংরেজির কোনো বিকল্প নেই।
- ৫. ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ইংরেজি জানা প্রয়োজন।
- ৬. বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
- ৭. বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম হলো ইংরেজি ভাষার যোগাযোগ।
- ৮. বিশ্ব সম্পর্কে জানার জন্য ইংরেজি জ্ঞান খুবই জরুরি।
- ৯. নিজেকে বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করার জন্য ইংরেজি জানার গুরুত্ব অপরিসীম।
- ১০. ভ্রমণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
Top 10 Tips for learning English
সবশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশে বসে ইংরেজি শিখলে আপনি কখনোই আফসোস করবেন না। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যান বা দেশেই কোনো চাকরি করুন, আপনার সার্বিক ক্যারিয়ার উন্নয়নে ইংরেজি দক্ষতা আপনাকে দারুণভাবে সাহায্য করবে। আর যদি আপনি ঘরে বসে ইনকাম বা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান, তাহলে ইংরেজি জানা থাকলে আপনি আরও অনেক ভালো করতে পারবেন।
ক্যারিয়ার থেকে আরও: পড়াশোনায় গ্যাপ দিয়ে অনার্স ভর্তি: কত বছর পর্যন্ত সুযোগ থাকে? জেনে নিন নিয়ম
[…] […]