পড়াশোনায় গ্যাপ দিয়ে অনার্স ভর্তি: কত বছর পর্যন্ত সুযোগ থাকে? জেনে নিন নিয়ম
কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে: এইচএসসি বা সমমানের পর পড়াশোনায় গ্যাপ দিয়ে অনার্স ভর্তি হতে চান? জেনে নিন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত কত বছর গ্যাপ গ্রহণ করা হয় এবং এই সংক্রান্ত বিস্তারিত নিয়মকানুন।
কত বছর গ্যাপ দিয়ে অনার্স করা যাবে
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা পাসের পর অনেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে এক বা একাধিক বছর বিরতি নেন। এই বিরতিকে সাধারণত ‘স্টাডি গ্যাপ’ বলা হয়। অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে, পড়াশোনায় কত বছর গ্যাপ থাকলে কি অনার্স কোর্সে ভর্তি হওয়া সম্ভব? দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্টাডি গ্যাপ সংক্রান্ত নিয়ম কানুন কেমন? এই ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
স্টাডি গ্যাপ কী এবং কেন শিক্ষার্থীরা গ্যাপ নেন?
স্টাডি গ্যাপ বলতে বোঝায় একটি শিক্ষা পর্যায় শেষ হওয়ার পর পরবর্তী পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার আগে নেওয়া বিরতি। এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য, কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয়ে সুযোগ না পেলে পুনরায় চেষ্টা করার জন্য, অথবা ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা আর্থিক কারণে অনেক শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বছর পড়াশোনা থেকে বিরতি নেন।
অনার্স ভর্তিতে স্টাডি গ্যাপের নিয়মকানুন
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স ভর্তির ক্ষেত্রে স্টাডি গ্যাপ সংক্রান্ত নিয়ম নির্দিষ্ট এবং এটি সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হয়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় – Public Universities
বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স ভর্তির ক্ষেত্রে স্টাডি গ্যাপের ব্যাপারে কঠোর নিয়ম অনুসরণ করা হয়।
সাধারণ নিয়ম: সাধারণত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার পাসের বছর এবং তার পূর্বের বছর (অর্থাৎ এক শিক্ষাবর্ষের গ্যাপ) পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। এর মানে হলো, আপনি যদি ২০২২ সালে এইচএসসি পাস করেন, তাহলে আপনি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় (সাধারণত ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়) অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করে থাকেন এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি না হয়ে থাকেন, তাহলে সাধারণত আপনি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
দুই বছরের বেশি গ্যাপ: বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসি পাসের পর দুই বা তার বেশি বছরের গ্যাপ থাকলে সাধারণত অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে না। অর্থাৎ, আপনি যদি ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন, তাহলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করার সুযোগ সীমিত হয়ে আসবে, বা অনেক ক্ষেত্রে থাকবেই না।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: এই নিয়মটি বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য হলেও, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বা নির্দিষ্ট কিছু বিভাগ ব্যতিক্রম হতে পারে। এছাড়াও, প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলারে এই সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে দেখে নেওয়া জরুরি।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় – Private Universities
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে নিয়ম সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক বেশি শিথিল হয়।
- নমনীয় নিয়ম: বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এইচএসসি পাসের পর কয়েক বছরের গ্যাপ নিয়েও ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকে। তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত নিজস্ব পদ্ধতিতে হয় এবং এখানে একাডেমিক বছরের চেয়ে শিক্ষার্থীর পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- নির্দিষ্ট গ্যাপের সীমা: যদিও নিয়ম নমনীয়, তবুও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বছরের গ্যাপ বেঁধে দিতে পারে। তবে সেটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কঠোর হয় না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় – National University
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অনার্স ভর্তির নিয়ম কিছুটা ভিন্ন।
গ্যাপের সুযোগ: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তিতে সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি সময়ের গ্যাপ গ্রহণযোগ্য হয়। তবে এখানেও প্রতি বছর ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে গ্যাপ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নিয়ম উল্লেখ করা থাকে, যা ভালোভাবে দেখে নিতে হয়। অনেক সময় ২ বা ৩ বছর পর্যন্ত গ্যাপ গ্রহণ করা হতে পারে, তবে এটি নিশ্চিত হতে অবশ্যই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখতে হবে।
কত বছর পর্যন্ত গ্যাপ সাধারণত গ্রহণযোগ্য?
- অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে: সর্বোচ্চ ১ শিক্ষাবর্ষের গ্যাপ (অর্থাৎ এইচএসসি পাসের বছর এবং তার পরের বছরের ভর্তি চক্রে)।
- প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে: সাধারণত কয়েক বছর পর্যন্ত গ্যাপ গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি, তবে নির্দিষ্ট নিয়ম বিজ্ঞপ্তিতে দেখতে হবে।
স্টাডি গ্যাপের প্রভাব এবং করণীয়
স্টাডি গ্যাপ নেওয়ার কিছু প্রভাব থাকতে পারে। বেশি গ্যাপ হয়ে গেলে অনেক ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। এছাড়াও, পড়াশোনার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়লে অনেক সময় পড়াশোনায় ফিরতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে।
তবে স্টাডি গ্যাপকে যদি গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে এটি ক্ষতির চেয়ে বেশি উপকারী হতে পারে। এই সময়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া, ভাষা বা কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতা অর্জন করা, বা অন্য কোনো শর্ট কোর্স করা যেতে পারে।
How many years can you take to do an honors degree with a gap?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি (Admission Circular) দেখে নেওয়া অত্যাবশ্যক। সেখানেই স্টাডি গ্যাপ সংক্রান্ত সবচেয়ে সঠিক এবং আপ-টু-ডেট তথ্য দেওয়া থাকে। নিয়ম যে কোনো বছর পরিবর্তিত হতে পারে, তাই অনুমানের উপর নির্ভর না করে সঠিক সূত্র থেকে তথ্য যাচাই করুন।
পড়াশোনায় গ্যাপ মানেই সব দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়। নিয়মকানুন বুঝে সঠিক পরিকল্পনা করলে এবং গ্যাপের সময়টা ভালোভাবে কাজে লাগালে অনার্স কোর্সে ভর্তি হওয়া সম্ভব। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ কিছুটা সীমিত হলেও, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিকল্প সবসময় খোলা থাকে। তাই হতাশ না হয়ে নিয়মগুলো ভালোভাবে জেনে আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রস্তুতি নিন।
আরও পড়ুন: Forest Guard: বন প্রহরীর কাজ কী? যোগ্যতা, বেতন ও ক্যারিয়ার গাইড
[…] […]